Home Interior Design Tips

মহামারীর প্রভাবে যেভাবে বদলে যেতে পারে ঢাকার বসতবাড়ির ইন্টেরিওর ডিজাইনের ধরন

July 23, 2020 | By

ঘরের অভ্যন্তরীণ নকশা বা ইন্টেরিওয়র ডিজাইন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা আমাদের জীবনে প্রশান্তির ছোঁয়া নিয়ে আসে।  ঘরের ডিজাইন সবসময়ই আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তনশীল। কিন্তু, এখন সময় এসেছে ভবিষ্যত সুরক্ষার কথা চিন্তা করে ঘরের ডিজাইন নিয়ে নতুন করে ভাবার। আশা করা যায়, বর্তমান এই মহামারী পরিস্থিতির খুব দ্রুতই অবসান ঘটবে। কিন্তু এর রেশ থেকে যাবে বহু সময় ধরে। তাই সুস্থ এবং সুন্দর জীবনযাপনের জন্য ঘরের ইন্টেরিওর ডিজাইনের ওপর নজর দেয়াটাও এখন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।

মহামারীর প্রভাবে বাসার ইন্টেরিওর ডিজাইনে কি কি পরিবর্তন আসতে পারে এবং এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কিছু দিক সম্পর্কে আজ এই ব্লগে আলোচনা করা হবে।

স্যাংচুয়ারি কর্নার

এই মহামারী আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে পার্থিব সব ঝুটঝামেলা এড়িয়েও কাজের মাঝে বিরতি নিতে হয় এবং জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তকে উপভোগ করতে হয়। এজন্য আমাদের এমন একটি জায়গার প্রয়োজন, যা আমাদের মনে প্রশান্তি নিয়ে আসতে পারে। আর এ কথা মাথায় রেখে আমরা আমাদের ঘরের বিশ্রাম নেবার রুম বা কর্নারটাকে এমন ভাবে সাজাতে পারি, যা শুধু আমাদের মনকেই সতেজ করে তুলবে তা নয়, এমনকি আমাদের রুচির প্রতিচ্ছবিও ফুটিয়ে তুলবে। এই ঘরটি হতে পারে একটি রিডিং কর্নার, কিংবা ঘরের একটি কর্নার যেখানে থাকবে চট-বেতে বাঁধানো কোনো দোলনা। অথবা জায়গাটি হতে পারে বারান্দার একটি কর্নার, যার একপাশে রাখা থাকবে একটি দোলনা বা একটি ক্যানভাস, যেখানে তুলির আঁচড়ে রঙিন করতে পারবেন আপনার জীবনের যে কোন মুহূর্তকে। ছিমছাম ফ্রেমে বাঁধানো কোন ছবির সাথে হালকা রঙিন দেয়াল আর বাতাসের পর্যাপ্ত আনাগোনায় জায়গাটি পাবে স্নিগ্ধতার ছোঁয়া। আর এখানে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তই হবে উপভোগ্য।

Image: urbanoutfitters.com
Image: Sheraspace

লিভ-ওয়ার্ক স্পেস

এতদিন ধরে চলে আসা কাজের ধরন থেকে সরে এবার আমাদের একটু অন্যভাবে ভাবার সময় এসেছে। Work from home, অর্থাৎ বাসা থেকে অফিসে কাজ করার চিন্তাধারা থেকেই আমূল পরিবর্তন আসতে পারে ভবিষ্যতের ইন্টেরিওর ডিজাইনের ধারণায়। লিভ-ওয়ার্ক স্পেস অর্থাৎ বাসস্থান এবং কর্মস্থান একই জায়গায় হওয়ার ধারণাটি একটি বিরাট পরিবর্তনের সূচনা, যা এর আগে আমরা কেউই কখনো ভাবিনি কিংবা আমাদের ভাববার প্রয়োজনই পড়েনি।

কাজের জন্য একটি আলাদা জায়গা শুধুমাত্র আমাদের কর্মক্ষমতাকেই বাড়ায় না, বরং ব্যক্তিগত জীবন এবং কর্মজীবনকেও আলাদা রাখতে সাহায্য করে। বর্তমান সময়ের সাপেক্ষে এই লিভ-ওয়ার্ক স্পেস অত্যন্ত জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু একই ঘরের দুটি কর্নারকে ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য আলাদা আলাদা ঘরের প্রয়োজন। হোম-অফিসের জন্য ঘরের আয়তন কিংবা দৈর্ঘ্য-প্রস্থের পরিমাপ অতটা জরুরী না হলেও ঘরটিকে অবশ্যই গোছালো রাখতে হবে। কাজের ধরন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেখানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

হোম-অফিস সেট আপ সম্পর্কে আরও জানতে হলে আপনি আমাদের স্বাচ্ছন্দ্যে ঘরে বসে কাজ করার ৭টি উপায় ব্লগটি পড়ে দেখতে পারেন।

Image: historiasdecasa.com.br
Image: Sheraspace

উপযুক্ত ম্যাটেরিয়াল বা উপকরণের ব্যবহার

ঘরের জন্য রুচিশীল আসবাবের সাথে এর জন্য যথাযথ উপকরণ নির্বাচনেও সতর্ক হলে তা ভবিষ্যতের জন্য ফলপ্রসূ হয়। আমরা এর মাঝেই জেনে গেছি যে- জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহৃত জিনিসপত্রে ছড়িয়ে থাকতে পারে। যেমন- দরজার বা ফ্রিজের হাতল। সুতরাং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি বাড়ির ডিজাইনেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়াটা জরুরি। সুস্থ থাকার জন্য বাড়ির ফ্লোর কিংবা আসবাবে এমন ম্যাটেরিয়াল বা উপকরণের ব্যবহার করা যেতে পারে, যা জীবাণু প্রতিরোধক এবং সহজেই যা জীবাণুমুক্ত করা যায়। যেমন- ফার্নিচারের ক্ষেত্রে প্লাইউডের ব্যবহার কিংবা কেবিনেট ম্যাটিরিয়াল। আবার পর্দা, কুশন কিংবা কার্পেটের জন্য সুতি এবং লিনেনের ব্যবহার করা যেতে পারে, যা সহজেই ধোয়া যায়।

Image: overstock.com
Image: pluck.kitchen

ছাদ এবং বারান্দার বাগান

এই কোয়ারেন্টিনে অনেকেই তাদের বিভিন্ন শখের কাজে সময় দিতে পারছে। কেউ কেউ নিজেদের বারান্দা বা ছাদে সবজি কিংবা বিভিন্ন চারা গাছ লাগিয়েছে। আমরা আমাদের শখের এই কাজটিকে ঘরের সৌন্দর্যচর্চার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এগিয়ে নিতে পারি। প্রকৃতির সান্নিধ্য পাওয়ার পাশাপাশি এই ছাদবাগান কিংবা বারান্দা বাগান মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ঘরের জন্য নির্মল বাতাস ও ভেজালমুক্ত শাকসবজি কিংবা ফলমূলেরও যোগান দেয়।

Image: elledecor.com
Image: familyfoodgarden.com

আলোকসজ্জা এবং রঙের ব্যবহার

কৃত্রিম আলো কিংবা বাতির ব্যবহারের চেয়ে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার ঘরের এবং স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপযোগী। আমাদের স্লিপ সাইকেল বা ঘুমের সময় ঠিক রাখতে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী। ঘরে কাঠের দরজার পরিবর্তে কাঁচের ব্যবহার করা এবং সঠিক জায়গায় আয়নার ব্যবহারে প্রাকৃতিক আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব।

ঘরকে প্রাণবন্ত রাখতে ঘরের জন্য সঠিক রং নির্বাচন করা জরুরী। এরই সাথে পরিচ্ছন্ন এবং ছিমছাম ভাব বজায় রাখতে সাদা, অফ- হোয়াইটের মতো হালকা রঙের ব্যবহার করা যেতে পারে।

Image: urbanoutfitters.com

নির্দিষ্ট শরীরচর্চার স্থান

এ বছরের আগ পর্যন্ত তেমন কেউ বাড়িতে জিমনেসিয়ামের কথা ভাবেনি। কিন্তু বর্তমান সময় সাপেক্ষে এটি একটি জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাসায় থাকা জিমনেসিয়ামে আপনি ঝামেলা ছাড়াই আপনার সুবিধামত ওয়ার্ক-আউট সেরে নিতে পারবেন।

বাসায় ব্যায়াম কিংবা শরীরচর্চার জন্য নির্দিষ্ট একটি জায়গা থাকলে শরীরচর্চার বিষয়টিও আমাদের কাছে বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। এছাড়া জিম মেম্বারশীপের ফি থেকেও মুক্তি মেলে আমাদের। অল্প সংখ্যক কিছু জিনিস, যেমন- ট্রেডমিল, ডাম্বেল অথবা একটি ইয়োগা ম্যাট নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার মাধ্যমে আমরা শরীরচর্চা করতে পারি। এছাড়া ঘরের শরীরচর্চার এই জায়গাটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Image: westofmaindesign.com
Image: thriftydecor.com

আমাদের পরিবর্তিত জীবনযাত্রার প্রভাব আমাদের বাড়ির ইন্টেরিওর ডিজাইনের ওপরেও প্রভাব ফেলবে। তাই দূরবর্তী চিন্তা করে আমাদের উচিত বিষয়গুলাকে নিয়ে এগিয়ে চলা। আশা করছি, মহামারীর প্রভাবে পরিবর্তিত ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইন নিয়ে লেখা এই ব্লগটি আপনাদের কাজে দিবে।

প্রফেশনাল ইন্টেরিওর ডিজাইনারের সাহায্য পেতে আজই Sheraspace এর সাথে যোগাযোগ করুন!

এই ব্লগটি English এ পড়ুন।

অনুবাদ: জান্নাতুল তাজরিয়া ফার্সি

You Might Also Like

No Comments

Leave a Reply