Budget Home Tips

ছোট বাড়ির জন্যে ইন্টেরিওর ডিজাইন

February 29, 2020 | By

রিয়েল এস্টেট বা ফ্লাটের দাম বাড়ার কারণে বর্তমানে অনেকেই এখন ছোট বাড়ি ভাড়া নেয়া বা কেনার কথা ভাবছেন। যেখানে কিছু মানুষ আর্থিক পরিস্থিতির কারণে ছোট বাসা খুঁজছেন, সেখানেই অনেক পরিবারই পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম হবার কারণে ছোট বাসা চাচ্ছেন। যদিও জায়গা ছোট হলে বাসার আসবাবপত্রের ধারণ ক্ষমতা কমে যায়, তার মানে এই নয় যে আপনাকে একটি অগোছালো ও অনাকর্ষণীয় বাসায় থাকতে হবে, যেখানে আপনার বাসার ভেতরে পড়ে থাকা জায়গার কোন সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না।

একভাবে চিন্তা করলে ছোট বাসা-বাড়ি আপনার জন্যে এক ধরনের ছদ্মবেশী আশীর্বাদের আগমন হতে পারে, কারণ বাসার ভেতরের সীমিত জায়গা আপনাকে আপনার এতোদিনের জমিয়ে রাখা অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলতে উৎসাহিত, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বাধ্যও করবে। আপনার বাসা আকারে যেমনই হোক না কেন, বাসার ভেতরের জায়গাটুকুর সঠিক ও যথাপোযোগী ব্যাবহার করা কে কন ক্ষেত্রেই সম্ভব। কেননা আপনার বাসাকে বড়, ছিমছাম ও চমৎকার দেখানোর অনেক ধরনের উপায় আছে। সেটাই আমাদের আজকের ব্লগের আলোচ্য বিষয়বস্তু।

রঙের ক্ষেত্রে হালকা বা নিউট্রাল টোন বেছে নিন

কোন ছোট জায়গাকে বড় দেখানোর সর্বপ্রথম কৌশলটি হচ্ছে দেয়ালে সাদা রঙ ব্যবহার করা। পর্দার ক্ষেত্রে সাদা রঙের হালকা ধরনের স্বচ্ছ পর্দা ব্যবহার করুন যাতে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস পরিশুদ্ধ হয়ে ঘরে প্রবেশ করতে পারে। এতে করে আপনার বাসায় শুধু একটি সতেজ পরিবেশই সৃষ্টি হবে না, ঘরের জায়গার পরিমাণও বেশি বলে মনে হবে। এই কৌশলটি শুধুমাত্র সাধারণ আর কার্যকরীই নয়, এটি নির্দ্বিধায় যে কোন ছোট জায়গাকে বড় দেখানোর সবচাইতে সহজ উপায়। সাদা রঙ অন্য সব রঙের প্রতিফলন ঘটায় এবং এর ফলে সহজাত প্রবৃত্তির কারণে দৃষ্টিভ্রম হয়ে কোন ছোট জায়গাকেও আমাদের বড় বলে মনে হয়।

গাঢ় যে কোন রঙ কোন জায়গাকে তার আসল পরিমাণের চাইতে ছোট দেখাতে উদবুদ্ধ করে। তাই আপনার ছোট্ট বাসার রঙ নিয়ে আপনি চিন্তিত হলে ঘরের ফ্লোরিং, দেয়ালের রঙ, সজ্জা এবং আসবাবপত্রের জন্যে সাদা এবং প্যাস্টেল শেড ব্যবহার করুন। এসব ক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন ঘরের বেশিরভাগ স্থানে একেবারে বেসিক সাদা কিংবা কালো বা ধূসর রঙের কোন হালকা শেড ব্যবহার করে ছোট শোপিস চয়নের ক্ষেত্রে রঙিন কিছু ব্যবহার করতে। উপযুক্ত ওয়াল হ্যাংগিং বা শোপিস ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার ঘরের সজ্জায় কোন নির্দিষ্ট টেক্সচার বা প্যাটার্ন তৈরির চেষ্টা করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরী যে পুরো জিনিসটি দেখতে যেন একেবারে সাধারণ হয় এবং আপনি যেন আপনার জন্যে নির্দিষ্ট বেসিক রঙের (সাদা, প্যাস্টেল এবং নিউট্রাল টোন) তালিকায় সীমাবদ্ধ থাকেন । এতে করে আপনার বাসার ঘরগুলো প্রশস্ত দেখাবে এবং নিঃসন্দেহে এটি আপনার বাসার আকারকে বড় দেখাতে সাহায্য করবে।  

Image : Pinterest

মিনিমালিজমের চেষ্টা করুন

মিনিমালিস্ট ইন্টেরিয়র ডিজাইন এই সময়ে সঙ্গত কারণেই বেশ জনপ্রিয়। মিনিমালিস্ট ইন্টেরিয়র হচ্ছে সমসাময়িক এবং ছোট জায়গা সাজানোর জন্যে অসাধারণভাবে কার্যকরী। এই ডিজাইন নিয়ে কাজ করার জন্যে আপনার ‘কম মানেই বেশি’ ধরনের মানসিকতা প্রয়োজন যেহেতু আপনি শুরুই করছেন একটি ছোট জায়গা নিয়ে। তাই অবশ্যই অতিরিক্তি আসবাবপত্র এবং সজ্জার জিনিস থেকে নিজেকে রেহাই দিন, এবং শুধুমাত্র সেই জিনিসগুলোই রাখুন যেগুলো আপনার জন্যে উপযোগী। এই থিমের ডিজাইন আপনার বাসার জায়গাকে শুধু খোলামেলা রাখতেই সাহায্য করে না, এটি আপনার বাসার সজ্জায় ব্যবহৃত বিশৃঙ্খল ও অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এড়িয়ে চলতেও কাজে লাগে, যার ফলাফল হিসেবে আপনার স্পেস বাস্তবের থেকে বেশি প্রশস্ত এবং বড় বলে মনে হয়। এই ডিজাইন মেনে চলতে চাইলে আপনার আসবাবপত্র চয়নের সময়ে সাধারণ এবং চটকদার নকশা পছন্দ করুন, এবং রঙের ক্ষেত্রে একরঙা হালকা বা প্যাস্টেল শেড ব্যবহার করুন। মিনিমালিস্ট ডিজাইন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার বাসার ভেতরের জায়গায় ভারসাম্য, শান্তি এবং নির্মল একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন এবং তাতে করে আপনার বাসার নান্দনিক আবেদন তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পাবে। 

Image : Pinterest

দ্বৈত কার্যকারীতা সম্বলিত আসবাব ব্যবহার করুন

যদি আপনার বাসার জায়গা ছোট হওয়া সত্ত্বেও আপনি মিনিমালিস্ট ডিজাইন ব্যবহারের ব্যাপারে উৎসাহী না হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে এমন আসবাব বা ফার্নিচার ব্যবহার করুন যার দ্বৈত কার্যকারীতা আছে, কনভার্টিবল (পরিবর্তনযোগ্য) এবং ফোল্ডেবল (ভাঁজ করে রাখা যায় এমন)। এতে করে আপনার ঘরে কোন বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। ‘অটো্ম্যান’ আসবাব হিসেবে একটি চমৎকার জিনিস যা ছোট কোন লিভিং রুম যেখানে দুই সেট সোফা একসাথে আঁটবে না – এমন কোন জায়গার জন্যে বেশ মানানসই। অটোম্যান লিভিং স্পেসের জন্যে যুতসই যার স্থান সহজেই পরিবর্তন করা যায় এবং যা ঘর সাজানোর উপকরণ হিসেবেও বেশ উপযোগী। আপনার বাসায় যদি ঘনঘন মেহমানদের আগমন হয়ে থাকে, এবং আপনার ছোট বাসায় তাদের থাকতে দেয়া নিয়ে আপনি চিন্তিত থাকেন, তবে আপনি কনভার্টিবল বিছানা-কাম-সোফার পেছনে খরচ করার চিন্তা করতে পারেন। এই ধরনের আসবাব মাত্র তিন জন বসতে পারে এমন আকারের সোফার জায়গা দখল করে, কিন্তু প্রয়োজন পড়লে এটিকে বড় করে আরো মানুষের জায়গা করে দেয়া সম্ভব। অপ্রত্যাশিত অতিথিদের জন্যে চেয়ার এবং বড় থ্রো বালিশগুলো বেশ উপযোগী। আপনার ডাইনিং টেবিলটিও এমন হতে পারে যেন প্রয়োজনে সেটিকে ফোল্ড করে দেয়ালের সাথে লাগোয়া করে ফেলা যায়, যাতে করে ডাইনিং টেবিলটি শুধু খাবারের জন্যেই না, আপনার কাজ করার জায়গা হিসেবেও রুপান্তরিত হতে পারে। ছোট জায়গার বাসাগুলোতে প্রয়োজনে ফোল্ড করা বা লুকিয়ে ফেলা যায় এমন আসবাব বেশ প্রয়োজনীয় ও উপযোগী। তাই ছোট বাসা হলে আপনার বাসার ভেতর সাজানোর জন্যে উপকরণগুলো ভেবে চিন্তে বিজ্ঞতার সাথে বাছুন।

Image : Pinterest

আয়নার বেশি বেশি ব্যবহার করুন  

বাসার জায়গা নিয়ে বিভ্রম তৈরি করার জন্যে আয়না হচ্ছে সবচাইতে সহজ ও কৌশলগত দিক থেকে সবচাইতে বুদ্ধিমান উপায়। তাই আপনার বাসা ছোট হয়ে থাকলে বেশি বেশি আয়নার ব্যবহার করে আপনার বাসার জায়গার গভীরতা বৃদ্ধি করুন। দেয়ালের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত আয়না থাকলে একটি ছোট বাথরুমকেও আয়তনে বেশ বড় বলে মনে হয়। আপনার ঘরের জানালার ঠিক বিপরীতে, হলঘরে কিংবা লিভিং রুমে আয়নার ব্যবহার নিঃসন্দেহে আপনার ঘরের বা বাসার জায়গাকে বড় দেখাতে সাহায্য করে এবং একই সাথে আপনার বাসার নান্দনিক সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। কোন জায়গাকে আলো-বাতাস পূর্ণ, খোলামেলা ও প্রশস্ত দেখানোর জন্যে আয়নার ব্যবহার তাত্ত্বিকভাবেও অনেক প্রাচীন একটি কৌশল। 

Image : Pinterest

আপনার স্টোরেজ স্পেসের যথার্থ ব্যবহার করুন

আপনার বাসা ছোট হলে সবচাইতে বড় যেই সমস্যার মুখোমুখি আপনি হবেন তা হলো স্টোরেজের জায়গা, আরো বিষদভাবে বলতে গেলে স্টোরেজের জায়গার অভাব। কয়েক দফা জিনিসপত্র বাতিল করার পরেও আপনার বাসায় অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার জন্য জায়গার অভাব হতে পারে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবার মূল চাবিকাঠি হলো উপলভ্য জায়গার প্রতিটি ইঞ্চিকে কাজে লাগানো এবং আপনার জায়গাটিকে খুব বেশি সীমাবদ্ধ না করে যেখানে সম্ভব সেখানেই স্টোরেজের সুযোগ তৈরি করা। শেলফের জায়গা বাড়ানোর একটি সহজ উপায় হলো বহু-স্তরযুক্ত একটি খোলা শেলফ কিনে ফেলা। আপনার খাটের নীচের খোলা জায়গাটিও আপনি একটি স্টোরেজের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, যেখানে আপনি ম্যাট্রেস বা বালিশের মতো বড় জিনিসগুলো স্টোর করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি আপনার আসবাবপত্র কেনার সময় সেগুলো কাস্টমাইজ করে সেখানে স্টোরেজের জায়গাকে বিল্ট-ইন করিয়ে নিতে পারেন, যাতে খুব ছোট কোন জায়গাও পরবর্তীতে আপনার জন্য কার্যকরী হয়। 

Image : Pinterest

একটি দুর্বল ডিজাইনের বাসা যুক্তিসঙ্গতভাবে বড় বা প্রশস্ত হলেও সেটি সেই বাসায় বসবাসকারী মানুষদের একসাথে শান্তিতে বসবাস করার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গাটি সরবরাহ নাও করতে পারে। অপরদিকে, একটি ছোট জায়গা সম্বলিত বাসাও একটি খোলামেলা বাসায় রূপান্তরিত হতে পারে শুধুমাত্র বাসা সাজানোতে সঠিক রঙ ও স্টোরেজের জায়গার সৃজনশীল ব্যবহারের জন্যে। আপনার ছোট বাসা বা এ্যাপার্টমেন্ট সাজাতে উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করুন, এবং মনে রাখবেন, এখানে আলোচ্য মূল কৌশলটিই হচ্ছে আপনার ছোট জায়গাকে বড় করে দেখানো। 

আপনার শখের বাসা বা ঘরটি কে সবচাইতে কার্যকরী উপায়ে ডিজাইন করতে আজই Sheraspace থেকে প্রফেশনাল সাহায্য নিন। আমরা বাসা-বাড়ি বা যে কোন ধরনের স্পেসে ইন্টেরিওর ডিজাইন ভিত্তিক সবরকম সেবা দিয়ে থাকি। 

অনুবাদ: নাজিয়া বিনতে শফিক

এই ব্লগ টি English এ পড়ুন

You Might Also Like

No Comments

Leave a Reply